তানোর, রাজশাহী : রাজশাহীর তানোরে হঠাৎ করেই আলুর বাজার কমে যাওয়ায় হতাশার ছাপ পড়েছে চাষীদের মাঝে। গত কয়েকদিন আগে আলুর বাজারমূল্য ভালো থাকার কারণে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই ‘স্বপ্ন’ সিন্ডিকেটের কারণে মলিন হয়ে পড়েছে।কেন এভাবে আলুর দাম কমছে-বাড়ছে। এর নিয়ন্ত্রণ করছে কে-কারা। এমন নানা প্রশ্ন আশা-নিরাশার জালে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিরাজ করছে।
আর এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে। ফলে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাষিরা।সম্প্রতি গেল বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে কাশেমবাজার ও কালীগঙ হাট বাজারে কথা হয়- আলু চাষি খালেকুজ্জামান বাটুল এর সাথে তিনি জানান,
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আলুর বাজার ছিল ১৫ টাকা থেকে সাড়ে ১৫ টাকা কেজি। কিন্তু সিন্ডিকেট চক্রের কারণে গত বুধবার থেকে কেজি প্রতি ২ টাকা করে কমে বর্তমানে ১৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বড়শো, মাসিন্দা, সিধাইড় ও সরনজাই মাঠসহ এসব এলাকায় আলু বেশি ফলন হয়, কিন্তু এবার বৃষ্টি পাত হওয়াতে আলুর ফলন কম হচ্ছে,
রায়তান আকচা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন মিলে ৬০ বিঘা জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে, এবার আলুর ফলন কম হয়েছে। বিঘায় ৭০/৭৫ বস্তা করে ফলন হয়েছে। কৃষকের নিজের জমি এজন্য লোকসান হবেনা। তবে, ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে বেশি লাভ হত। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। আর আলুর দাম কমেছে কেন জানা গেছে, কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তর অঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলাটি।
দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। চাষাবাদের জমি রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর । এই উপজেলার জনসাধারণের আয়ের মুল উৎস প্রথমে ধান তারপর আলু চাষ ।বিশেষ করে আলু চাষ করে অনেকের ভাগ্য খুলেছে।কারণ আলুর চাষাবাদে খরচ হয় প্রচুর। দাম ভালো পেলে লাভও হয় অনেক। অবশ্য গত বছরে চাষিদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তার আগের মৌসুমে বাম্পার লাভ হয়েছিল।
এমনকি ৪০/৪৫ টাকা কেজি দরেও আলু বিক্রি হয়েছিল। তবে, এই দাম অল্প সময় ছিল। ওই মৌসুমে হিমাগারে আলু রাখা বেশিরভাগ চাষিরা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলেন। প্রচুর লাভ গুনেছিলেন।চলতি মৌসুমেও জমি থেকেই ১৫ সাড়ে ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি করতে পেরেছেন অনেকেই। কিন্তু এর পরিমাণ অনেক কম।
বর্তমানে উপজেলা জুড়েই আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। প্রতিটি মাঠে নারী পুরুষ থেকে শুরু করে গ্রামের সব বয়সের মানুষরা আলু তুলতে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বরাবরের মত বহিরাগত শ্রমিকরাও এসেছেন তানোরে আলু উত্তোলন করতে। হিমাগারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আলু রাখা বেশকিছু চাষিরা জানান, গত মঙ্গলবারে হিমাগার মালিকরা ও ব্যবসায়ীরা মিটিং করে আলুর দাম কেজি প্রতি দুই টাকা করে কমিয়ে দেয়।
তারাই আলু নিয়ে মহাসিন্ডিকেট করেন। দাম কমার কারণে অনেক চাষিরায় আলু তুলছেন না। উপজেলার চান্দুড়িয়া মাঠের দুলাল মন্ডল ০৫ বিঘা আলু রোপন করেছেন। তিনি জানান, গত বুধবারে আলু তুলতাম। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় আলু তোলা বন্ধ করেছি। একই এলাকার মাহাবুর জানান, আমিও ১০ বিঘা জমির আলু উত্তোলন করিনি। একই গ্রামের তরুণ চাষী মুকুল ৫ বিঘা জমির আলু তুলেনি।
শুধু এরাই না অনেক চাষীই আলু তুলছেন না।এব্যাপারে তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার শামিমুল ইসলাম জানান, আলু রোপন থেকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে। এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে । অনেকে আলু উত্তোলন করে ওই জমিতে ধান রোপন করে ফেলেছেন। চলতি মৌসুমে আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু তা বেড়ে রোপন হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। তিনি আরো জানান, এই উপজেলায় এবারে ২০টি নতুন জাতের আলু চাষ হয়েছে।
সেগুলো বিদেশে রপ্তানি হবে। যাতে করে আলু চাষীরা এসব জাতের আলু চাষ করে বেশি লাভবান হতে পারেন এবং আলু চাষে এক নতুন দিগন্তের সুচনা হয় এজন্যই মাননীয় কৃষি মন্ত্রী সরেজমিনে এসে চাষীদের এসমস্ত জাতের আলু চাষের জন্য আগ্রহ বাড়াতে এবং এ অঞ্চলের মাটিতে অল্প সময়ের মধ্যে কি ধরনের ফসল উত্তোলন করে বেশি লাভবান হতে পারেন কৃষকরা সে সব নিয়ে কাজ করছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এর সুফল অল্প দিনেই পাবেন কৃষকরা।শুক্রবারেও বেশকিছু চাষীরা জানান, আলুর বাজার কমতেই আছে। প্রকার ভেদে ১২ টাকা সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি। সবচেয়ে ভালো আলু ১৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এর পরিমাণ খুবই কম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।